মহিলা পরিষদের তরুণী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০১৬, ০১:৩৬

জাগরণীয়া ডেস্ক

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ১-৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ “ধর্মীয় মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ প্রতিহত করি - তরুণ সমাজকে নারী আন্দোলনে যুক্ত করি ’’ এই স্লোগান নিয়ে সাংগঠনিক মাস পালন করা হয়। এই উপলক্ষে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩:৩০ মিনিটে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে তরুণী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। 

সমাবেশে তরুণদের পক্ষ থেকে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রী হালিমা- তুস- সাদিয়া, আদিবাসী রিতিশা চাকমা, তরুণ কর্মজীবী আসাদ দৌল্লাহ আল সায়েম, আবৃত্তিকার লায়লা আফরোজ, আমাদের অর্থনীতির বিশেষ প্রতিনিধি উম্মুল ওয়ারা সুইটি এবং চলচ্চিত্রকার জান্নাতুল ফেরদৌস আইভী। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক কানিজ ফাতেমা টগর। সভার শুরুতেই সংঙ্গীত পরিবেশন করেন মোহিত খান।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়শা খানম বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মাসব্যাপি সাংগঠনিক মাস পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সকল শ্রেণী পেশার নারীদের কাছে নারী আন্দোলনের কথা বলা। তিনি সংগঠনের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সকল সংগঠকদের ধন্যবাদ জানান। 

তিনি বলেন, আজ আমাদের নারীর এই অগ্রসর হওয়ার পিছনে যেমন নারী আন্দোলনের অবদান রয়েছে তেমনি নারী আন্দোলন কাজ করে যাচ্ছে মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ প্রতিহত করার জন্য। 

তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক প্রজন্ম নিজের সফলতার কথা বলে, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে নিজের প্রজন্মের সফলতা আনতে হলে তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। আয়শা খানম বলেন সমাজে প্রচলিত পিতিৃতান্ত্রিক কাঠামো থেকে বের হয়ে আসতে হলে এবং একটি অসাম্প্রদায়িক, মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।   

সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ। 

তিনি বলেন, সকল প্রজন্মের সম্মিলনেই বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। যে স্বপ্ন নিয়ে এই সংগঠনটি সমাজ, দেশ ও বিশ্বের কাছে দাঁড়িয়েছিলো তার মূল লক্ষ্য ছিলো নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা। তিনি বলেন যুগ যুগ ধরে নারীর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নারী আন্দোলন কাজ করে আসছে, নারীরা নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে। আজ থেকে দুই প্রজন্ম আগে তারা ভাবতে পারেনি সমাজে নারীরা এতো এগিয়ে যাবে। তারুণ্যের শক্তির বিকশিত রুপই নারী আন্দোলনের মূল শক্তির জায়গা। 

তিনি আরো বলেন, আজকের তরুণীরা অনেক এগিয়ে গেছে এটা যেমন সত্যি তারা নানা ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করছে এটাও তেমনই সত্যি। সমাজের নেতিবাচক ধারা নারীকে যেভাবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন করছে তা মোকাবেলা করতে, মৌলবাদের বিস্তারকে প্রতিহত করতে সকলকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। 

তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুক্ত চিন্তার জায়গা, মত প্রকাশের জায়গা এখন নেই। কাজেই এই পরিস্থিতি দূর করতে সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রসহ সকলকে ভাবতে হবে এবং সংগঠিত শক্তির মাধ্যমে আমাদের এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। 
  
শুভেচ্ছা বক্তব্যে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম বলেন, নারীর অধিকার মানবাধিকার। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭০ সালে জন্ম হয় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নামে একটি গণ-নারী সংগঠনের। 

তিনি বলেন, মহিলা পরিষদের অগনিত সদস্যের পাশাপাশি তরুণীদের অবদান অপরিসীম। এই সংগঠন নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বছরে একটি বিশেষ মাসকে মহিলা পরিষদ সাংগঠনিক মাস ঘোষনা করে থাকে। এরই আলোকে আজকের এই আয়োজন। কারণ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মনে করে তরুণরাই আগামীর ভবিষ্যত। তারাই ভবিষ্যতে সমাজে গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, তাদের চাহিদার ভিত্তিতেই নারী আন্দোলন এগিয়ে যাবে এবং আজকে তরুণদের কাছ থেকেই আমরা শুনবো গণতান্ত্রিক, মানবিক অসাম্প্রদায়িক,জঙ্গীমুক্ত সমাজ গড়তে কি করতে হবে। তার ভিত্তিতেই আমাদের সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বক্তারা বলেন তরুণ প্রজন্মকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। নিজেদের আলোচনায় তারা ব্যক্তিজীবনের বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেন। তারা বলেন আমরা যুক্তি দিয়ে, আলোচনার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে প্রভাবিত করতে পারি এবং যেহেতু আমরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ সেহেতু আমরা জঙ্গীবাদ প্রতিহত করতে একসাথে কাজ করলে অবশ্যই আমরা তা প্রতিকার করতে পারবো। পরিবার থেকেই আমাদের সংগঠিত হতে হবে। 

বক্তাদের মধ্যে আদিবাসী রিতিশা চাকমা বলেন, আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি প্রতিনিয়ত আমাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে যে আমি পাহাড়ি। একইভাবে ঢাকা শহরে আদিবাসী নারী হিসেবে এবং দ্বিতীয়ত নারী হিসেবে প্রতিনিয়ত আমাকে বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। আমরা চাই আজকের তরুণ প্রজন্ম এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। নারীরা ধর্মীয়, সামাজিক, আইনগতসহ বিভিন্নভাবে নিপীড়নের শিকার। নৈতিকতা এবং তরুণ প্রজন্মের বিচ্ছিন্নতার কারণে আজ সমাজে নারীরা বৈষম্যের শিকার। রাষ্ট্রীয় জীবনে আজ আমরা অনেক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। নারীকে বৈরি পরিবেশের সাথে লড়াই করে সবসময় টিকে থাকতে হয়। কিন্তু তারপরও আমরা থেমে থাকবো না। 

বক্তারা বলেন, যে দেশে বেগম রোকেয়া ছিলেন, সুফিয়া কামাল ছিলেন, আজকে নারীদের পাশে আছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন নারী সংগঠন, আমরা থেমে থাকবো না।  আজকের তরুণপ্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে সমাজের এই অবক্ষয় থেকে বের হয়ে আসার জন্য। তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ, নারীর আন্দোলনের ইতিহাস পড়ার জন্য তারা আহ্বান জানান। ধর্মীয় মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ আজ ছড়িয়ে পড়েছে এটা ঠিক কিন্তু তার পাশাপাশি এটাও ঠিক যে তারা সংখ্যায় অনেক কম। আর তাই  এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে  হবে। একই সাথে অভিভাবকদের সাথে এই বিষয়ে সভার করার জন্য আহ্বান জানান বক্তারা। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত