২০ বছর ধরে বিচারের জন্য ঘুরছেন ফাতেমা

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০১৮, ১৫:৫৮

জাগরণীয়া ডেস্ক

২০ বছর ধরে স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে আদালত পাড়ায় ঘুরছেন রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা নিহত জুম্মন মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগম। ১৯৯৮ সালে সন্ত্রাসীরা তাকে তুলে নিয়ে হাতুড়িপেটা করে নির্মমভাবে হত্যা করে। কিন্তু এতো বছরেও সেই ঘটনার বিচার পাননি স্ত্রী ফাতেমা।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ৩ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের সামনে থেকে দুর্বৃত্তরা জুম্মন মিয়াকে ধাওয়া করে। জুম্মন মিয়া তখন দৌড়ে পাইকপাড়ার আবদুল হালিমের বাড়িতে আশ্রয় নেন। কিন্তু দুর্বৃত্তরা সেখান থেকে তাকে টেনে-হিঁচড়ে দারুস সালামে এশিয়া সিনেমা হলের পেছনে নিয়ে হাতুড়ি ও ইট দিয়ে পিটিয়ে শরীর থেঁতলে দেয়। সেখানে কয়েক ঘণ্টা অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকার পর তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় দুই দিন পর ৫ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় জুম্মনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম ১৯৯৮ সালের ৫ ডিসেম্বর মিরপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। তাতে মৃত্যুর আগে জুম্মনের বলে যাওয়া হামলাকারী হিসেবে আনিস, আলেক, সামছুদ্দিন, জাবেদ, মনির ওরফে মন্টু ও আবুলকে আসামি করা হয়। 

মামলার এজাহারে বলা হয়, হকার সমিতির টাকা-পয়সা লেনদেন নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে জুম্মনকে হত্যা করা হয়েছে।

মামলার নথি থেকে আরো জানা যায়, ১৯৯৯ সালের ১৮ এপ্রিল আনিস, আলেক, সামছুদ্দিন, জাবেদ ও মনির ওরফে মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। এরপর ২০০১ সালের ডিসেম্বরে এ মামলা বিচারের জন্য ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। পরে ২০০২ সালের ৩ জানুয়ারি ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য নথি পাঠানো হয়। একই বছরের ১৬ জুলাই ওই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

কিন্তু অভিযোগ গঠনের পর প্রায় ১৬ বছর পার হলেও মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। 

ফাতেমা বেগম বলেন, "এত বছরে ২০ জন সাক্ষীর মাত্র দুজন সাক্ষ্য দিছে। ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিতে কত বছর লাগবে? জীবন থাকতে কি বিচার শেষ হবে? আমরা গরিব সেই কারণেই বিচার অইত্যাছে না"।

কান্না বিজড়িত কণ্ঠে ফাতেমা বলেন, "জীবনে এখন চাওয়া-পাওয়ার কিচ্ছু নাই। শুধু স্বামীকে যারা খুন করেছে তাদের বিচার চাই। আমার ছেলে-মেয়েরাও বাবার খুনের বিচার চায়"। 

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট মামলার বাদী ফাতেমা বেগম সাক্ষ্য দেন। এর প্রায় এক বছর পর ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট সাক্ষ্য দেন মো. আতাউল্লাহ নামে একজন সাক্ষী।

ফাতেমাকে আদালতে সাক্ষ্য দিতে সহযোগিতা করা অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন জানান, ২০১৪ সালের দিকে আদালতেই ফাতেমার সঙ্গে তার দেখা হয়। ফাতেমা সাক্ষ্য দিতে পারছেন না, মামলার খোঁজও জানেন না জেনে আদালত খুঁজে বের করেন অ্যাডভোকেট দেলোয়ার। পরে বাদীকে সাক্ষ্য দিতে আদালতে নিয়ে যান।

অ্যাডভোকেট দেলোয়ার বলেন, "স্থানীয় থানা পুলিশ সাক্ষীদের হাজির করতে আদালতের নির্দেশ পালন করে না। সাক্ষী হাজির করতে না পারলে একসময় সাক্ষীর অভাবে এই মামলায় আর কিছু প্রমাণ হবে না। স্বামী হত্যার বিচার পাবেন না ফাতেমা"।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত