যৌন হয়রানির অন্য রূপ এক্সিবিশনিজম এবং প্যারাফিলিয়াস

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০১৭, ২২:৫৪

জাগরণীয়া ডেস্ক

ঠিক সন্ধ্যার পরপরই অফিস থেকে বের হয়ে বাড়ির পথে ফিরছিল সুমি। বাসায় ফেরার পথে বাড়ির সামনের ফুট ওভার ব্রিজে উঠলো সে। একটু ভয় লাগছিল, কারণ বেশ শুনশান নীরবতা চারদিকে। ওভার ব্রিজে ওঠার পরেই একটু খটকা লাগলো। একটি ছেলে দাঁড়িয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করছে। ভয়ে দ্রুত হেঁটে নেমে গেলেও বুঝতে বাকি রইল না ছেলেটি কী করছিল! বিষয়টি সুমির মনে গভীরভাবে দাগ কাটে। বিষয়টি সুমিকে তাড়া করে বেড়ায় অনেকদিন।

ইদানীং এমন বাজে অভিজ্ঞতার শিকার হচ্ছেন অনেক নারী। সরাসরি কোন কথা উচ্চারণ না করে কিংবা শারীরিক স্পর্শ ছাড়া শুধুমাত্র অশালীন অঙ্গভঙ্গি, যৌনাঙ্গ প্রদর্শন কিংবা নারীদের সামনে স্বমেহন করাও যৌন হয়রানির আরেক রূপ। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে অনেক নারীকেই। পাবলিক বাসে, জনশূন্য এলাকায় এমনকি নিজের ঘরেও কাছের আত্মীয়দের মাধ্যমে এধরণের হয়রানির স্বীকার হতে হয় অনেক নারীকে। এমনকি মেয়েদের স্কুলের পেছনে কিংবা হোস্টেলের নিচে দাঁড়িয়েও অনেক বিকৃত মানসিকতার পুরুষ এ ধরণের হয়রানি করে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভয়ে কিংবা লোক লজ্জার ভয়ে মেয়েরা বিষয়টি এড়িয়ে যায়। কিন্তু মানসিক চাপে ভুগতে থাকে বিষয়টি নিয়ে।

নিউইয়র্ক টাইমসে একবার কমেডি অভিনেতা লুইস সিকে কে এ ধরণের হয়রানির জন্য অভিযুক্ত করে একটি রিপোর্ট করা হয়। লুইসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে হোটেল রুম কিংবা অফিসে এই অভিনেতা নারীদের সামনে স্বমেহন করতেন। অভিযোগ স্বীকার করার পরে লুইস বলেন, ‘বিষয়টি সত্যি। আমার কাছে মনে হয়েছে যা করছি ঠিক করছি কারণ অনুমতি না নিয়ে কাউকে যৌনাঙ্গ প্রদর্শন করিনি।’

এবিসি নিউজের সাংবাদিক মার্ক হালপেরিন এর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ তুলেছিলেন চার নারী। তাদের অভিযোগ ছিল হালপেরিন নারীদের সামনেই হস্ত মৈথুন করতেন। অবশ্য হালপেরিন বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ডিরেক্টর এবং প্রডিউসার ব্রেট রাটনারের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ তুলেছিলেন অভিনেত্রী অলিভিয়া মুন। রাটনারও অস্বীকার করেছিলেন বিষয়টি। এধরনের অভিযোগ উঠেছিল আরও অনেক নামী তারকার বিরুদ্ধে যাদের প্রায় সবাই বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

কেন এ ধরণের আচরণ?

টরেন্টো সেক্সুয়ালিটি সেন্টার এর ডিরেক্টর এবং ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টো এর মেডিসিন ফ্যাকাল্টির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জেমস ক্যানটর বলেন, এ ধরণের বিকৃত মানসিকতার অনেক পুরুষের চিকিৎসা করেছেন তিনি। পরিচিত কিংবা অপরিচিত মানুষের সামনে স্বমেহন করে কিংবা যৌনাঙ্গ প্রদর্শন করে বিকৃত আনন্দ পাওয়ার এই রোগ দুটোর নাম হলো এক্সিবিশনিজম এবং প্যারাফিলিয়াস।

এক্সিবিশনিজমে নিজের যৌনাঙ্গ দেখানো ছাড়া আর কোন চাহিদা থাকে না। শুধুমাত্র এতেও আনন্দ পায় এ ধরণের মানসিক বিকারগ্রস্ত পুরুষ। কিন্তু ঘটনার শিকার হওয়া নারী খুবই ভয় পেয়ে যান। কারণ তিনি জানেন না এরপরে তার সঙ্গে কী ঘটতে যাচ্ছে।

ক্লিনিক্যাল সাইকোলোজিস্ট এবং ‘দ্য মিথ অব সেক্স অ্যাডিকশন’ বইয়ের লেখক ডেভিড লে এর মতে, কেন এ ধরণের বিকৃত চিন্তা কোন পুরুষকে এসব করতে প্ররোচিত করে তা বলা মুশকিল। তবে এ ধরণের মানুষ নারীদের মনোযোগ পেতে চায় এবং নারীদেরকে আকর্ষণ করতে চায়। নারীর উপর ক্ষমতা বিস্তার করা কিংবা স্বেচ্ছাচারিতা চালানোটাও আরেকটি উদ্দেশ্য এ ধরণের আচরণের। তবে এধরণের আচরণ যারা করে তারা নিজেদেরকে দোষী ভাবে না। তাদের মতে, এটা তো ধর্ষণ নয়, তাই এটা অপরাধও নয় বলে মনে করে তারা। 

সূত্র: চ্যানেল আই অনলাইন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত