চলন্ত বাসে পোষাক শ্রমিককে ধর্ষণ, অতঃপর.....

প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:৩০

জাগরণীয়া ডেস্ক

ছুটির দিন তিন বান্ধবীকে নিয়ে এক পোশাককর্মী চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে যান। সন্ধ্যার পর বাসে করে তারা বাড়ি ফিরছিলেন। পথে শহরের বহদ্দারহাট এলাকায় অন্য যাত্রীদের সঙ্গে তার তিন বান্ধবীও বাস থেকে নেমে গেলে বাসে  তখন ওই তরুণী একা। যাত্রী নামিয়ে চলন্ত বাসে চালকের সহকারী সব জানালা বন্ধ করে দরজাও আটকে দেন। ছুরি নিয়ে এসে বাসের একমাত্র যাত্রী ওই তরুণীকে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেন চালকের সহকারী। এরপর চালক উঠে এসে ধর্ষণ করেন তরুণীকে। 

গত ২৭ অক্টোবর এ ঘটনা ঘটলেও লোক-লজ্জায় কাউকে বলেনি ওই তরুণী। ঘটনার সাত দিন পর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও থানায় দুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন তিনি। পরদিন ওই বাসের চালক রাশেদুল ইসলাম (২০) ও সহকারী ইমতিয়াজ উদ্দিনকে (১৮) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

৪ নভেম্বর অপরাধ স্বীকার করে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নাজমুল হোসেন চৌধুরীর আদালতে জবানবন্দি দেন বাসচালক ও সহকারী।

ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী বলেন, তিনি শহরের কালুরঘাট এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। ঘটনার পর তিনি ভয়ে ছিলেন। এ জন্য বাসা থেকে বের হননি। শহরে তিনি বড় বোনের বাসায় থাকেন। পরে পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার বলেন, চালক ও সহকারীর চেহারা সম্পর্কে ওই তরুণীর কাছ থেকে কিছুটা ধারণা নিয়ে তারা অভিযান শুরু করেন। গত শনিবার বহদ্দারহাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার পর দুজনই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন। পরে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন।

এ ঘটনা আগে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় এক গৃহবধূকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়। এ ছাড়া গত ২৫ আগস্ট টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করেন বাসচালক, সহকারীসহ পাঁচ পরিবহন শ্রমিক।

২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতের দিল্লিতে চলন্ত বাসে নির্ভয়া (ছদ্মনাম) নামের এক ছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জে চলন্ত একটি বাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বাসচালক ও চালকের সহকারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ২০১৫ সালের ১২ মে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে চলন্ত বাসে এক পোশাককর্মীকে ধর্ষণ করে রাস্তায় ফেলে দেন বাসচালক ও চালকের সহকারী। ঢাকায় এক গারো তরুণীকে চলন্ত মাইক্রোবাসে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। গত বছরের ২৩ জানুয়ারি বরিশালে একটি বাসে দুই বোনকে ধর্ষণ করেন পাঁচ পরিবহনকর্মী। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি ময়মনসিংহের নান্দাইলে একটি বাসে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে চালকসহ তিন পরিবহনকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়।

অসহায় নারীদের বিনা মূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়া চট্টগ্রামের মানবাধিকারকর্মী তুতুল বাহার বলেন, পৈশাচিক এসব ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি গাড়িতে চালক ও সহকারী নিয়োগের ক্ষেত্রে মালিকপক্ষকে আরও সচেতন হতে হবে। নারীরা রাস্তায় এ ধরনের ঘটনার শিকার হলে দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে। হাজারো কর্মজীবী নারী রাতে বাসায় ফেরেন। রাস্তায়, যানবাহনে তারা যাতে নিরাপদ বোধ করেন সে পরিবেশ সৃষ্টিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত