সাত দিন ধরে হাঁটছেন অন্তঃসত্ত্বা হাসিনা

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০১৭, ১২:১৮

জাগরণীয়া ডেস্ক

পেটে ছয় মাসের বাচ্চা, তার পরও প্রাণ বাঁচানোর দায়ে টানা সাত দিন হেঁটে রাখাইন থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পৌঁছেছেন হাসিনা বেগম। সঙ্গে সাত সন্তান আর স্বামী। পা ফুলে ঢোল। একটা বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এসেছেন দীর্ঘ বিপদসংকুল পথ। তবে এখনও বাংলাদেশে ঢুকতে পারেননি। আটকা পড়ে আছেন পালংখালীর আনজুমানপাড়া সীমান্তের বাংলাদেশ অংশের শূন্যরেখা বরাবর। শুধু হাসিনারা নন, আটকে আছেন তাদের মতো আরও বহু শরণার্থী। জীবন বাঁচানোর জন্য রাখাইন ছেড়ে পালিয়ে আসা হাজারো মানুষ গত সোমবার থেকে অপেক্ষা করছে। 

যখন এই রোহিঙ্গা মায়ের সঙ্গে আলাপ হয়, তখনও গত ২৪ ঘণ্টা ধরে তারা পুরো পরিবার অনাহারে। মিয়ানমার থেকে তারা খালি হাতে এসেছেন। খাবার কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই তাদের।

হাসিনা বেগম জানান, মিয়ানমারেও গত দু'মাস ধরে তাদের খাবারের সংস্থান ছিল না। তাদের পরিবার সেনা নির্যাতনের মুখে না পড়লেও স্থানীয় রাখাইন বৌদ্ধ ও সেনাদের অসহযোগিতার শিকার হন। গত ২৫ আগস্টের আগে স্থানীয় বৌদ্ধদের কাজ করে করেই সংসার চলত তাদের। তার স্বামী একজন রাজমিস্ত্রি। সেনাবাহিনী কিংবা বৌদ্ধদের বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠানেই একমাত্র তার কাজ করার সুযোগ ছিল। কিন্তু দু'মাস ধরে কোনো কাজ পাননি তার স্বামী।

তারা খাদ্যসংকট পড়ে গিয়েছিলেন। তাদের দশজনের সংসার এবং অনাগত একজন রয়েছে পেটে, কিন্তু রোজগার নেই। তাই নিরুপায় হয়ে পালিয়ে এসেছেন বলে জানান তিনি।

হাসিনার মতো হাজারো মানুষ গত সোমবার থেকে অপেক্ষায় করছে পালংখালীর আনজুমানপাড়া সীমান্তের বাংলাদেশ অংশের শূন্যরেখা বরাবর।

তাদের সেখান থেকে আর এগোতে দিচ্ছে না বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি। বলা হচ্ছে, যাচাই-বাছাই হবে তাদের এবং তারপর রোহিঙ্গা শিবিরগুলো থেকে সেনাবাহিনীর নির্দেশনা এলেই তাদের এগোতে দেওয়া হবে।

তারা খোলা আকাশের নিচে ধানক্ষেতের আলের ওপর রয়েছেন। রোদে পুড়ছেন, বৃষ্টিতে ভিজছেন। অনাহারে-অর্ধাহারে থাকছেন। এদের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের শূন্যরেখায় রয়েছে আরও হাজারো রোহিঙ্গা। তারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত