তালাক দিয়েও প্রাণে বাঁচলেন না জেসমিন

প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:৫৯

জাগরণীয়া ডেস্ক

প্রায় সাত বছর আগে পরিবারের অমতে জেসমিন প্রেম করে সবুজকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সবুজের আগের স্ত্রী ও দুই সন্তানের বিষয়ে জানতে পারেন জেসমিন। এরপর কিছুদিন বাবার বাড়িতে এসে থাকলেও সবুজের পীড়াপীড়িতে আবার ফিরে যান। ‘যা হওয়ার হয়েছে’ বলে পরিবারের লোকজনও বোঝান। জেসমিন ফিরে যান স্বামীর কাছে। কিন্তু তার স্বামী সবুজ প্রচণ্ড সন্দেহবাতিকগ্রস্ত লোক। এসব নিয়ে প্রায়ই পরিবারে অশান্তি হতো আর জেসমিন মারধরের শিকার হতেন। 

এক পর্যায়ে সবুজকে তালাকের নোটিশ দেন জেসমিন। তারপর একটি দোকানে চাকরি নেন। তালাক দিয়েও প্রাণে বাঁচলেন না জেসমিন। গত রবিবার সকালে সেই দোকানে ঢুকে তাকে ছুরি মেরে হত্যা করেন সবুজ শেখ। হত্যাকাণ্ডের পুরো দৃশ্যটি দেখা গেছে দোকানের ভেতরে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। অভিযুক্ত সবুজকে এখনো ধরতে পারেনি পুলিশ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে নিজের মুঠোফোনে জেসমিনের একটা রক্তাক্ত ছবি দেখিয়ে ছোট ভাই রাশেদ (১৭) এসব কথা বলে। মোহাম্মদপুরের রাজিয়া সুলতানা সড়কে নব্য নামের একটি কাপড়ের দোকানে দুই মাস আগে কাজ নিয়েছিলেন জেসমিন আক্তার (২৬)। মাসিক বেতন সাত হাজার টাকা। । 

দোকানটির মালিক সায়েম হোসেন বলেন, দোকানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, সকাল ১০টার দিকে ফারিহা ও জেসমিন দোকান খুলে ঝাড়ামোছা শুরু করেন। ফারিহা দোকানটির একদিকে পরিষ্কার করছিলেন। জেসমিন তখন একটা কাপড় দিয়ে ক্যাশ কাউন্টার মুছছিলেন। তখন ১০টা বেজে ১১ মিনিট। এ সময় সবুজকে ঢুকতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ কথা বলার পর সবুজ জেসমিনের মুঠোফোনটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে সবুজ পকেট থেকে ছুরি বের করে জেসমিনকে আঘাত করতে থাকেন। পরে জেসমিন ধস্তাধস্তি ছেড়ে বসে পড়েন।

দোকানমালিক বলেন, এ সময় ফারিহা দৌড়ে দোকানের বাইরে গিয়ে চিৎকার শুরু করেন। পরে অন্যরা এগিয়ে আসার আগেই সবুজ পালিয়ে যান। দুই মাস আগে জেসমিন বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরির জন্য যেদিন এসেছিলেন, সেদিন তাঁর স্বামী সবুজও এসেছিলেন। জেসমিন সাভারে থাকতেন, সেখান থেকে যাতায়াত করতেন।

স্বজনেরা বলেন, প্রায় সাত বছর আগে পরিবারের অমতে জেসমিন প্রেম করে সবুজকে বিয়ে করেন। জেসমিনের সঙ্গে তাঁর পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্যের কথা বলা পর্যন্ত সহ্য করতে পারতেন না সবুজ। খালাতো-মামাতো ভাই, এমনকি মামা-চাচারা পর্যন্ত জেসমিনকে ফোন করলেও সবুজ অত্যাচার করতেন। এসব নিয়ে প্রায়ই পরিবারে অশান্তি হতো আর জেসমিন মারধরের শিকার হতেন।

সবুজ সব সময় জেসমিনকে অনুসরণ করতেন। মোহাম্মদপুরে দোকানে চাকরি নেওয়ার আগেই সবুজকে তালাকের নোটিশ দেন জেসমিন। খালাতো ভাই রাসেল বলেন, স্বামীর সংসার করবেন না বলে হন্যে হয়ে কাজ খুঁজছিলেন জেসমিন। পড়াশোনা নবম শ্রেণি পর্যন্ত হওয়ায় ভালো চাকরিও জুটছিল না। শেষ পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের ওই দোকানটিতে চাকরি হয়। কিন্তু সবুজ তা মানতে চাইছিলেন না। তিন দিন আগেও সবুজ লোকজন নিয়ে জেসমিনদের সাভারের বাড়িতে আসেন। তাঁরা তালাক মানেন না বলে জেসমিনকে স্বামীর ঘরে ফেরাতে পরিবারের লোকজনকে হুমকি দেন।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামালউদ্দীন মীর বলেন, এ বিষয়ে নিহত ব্যক্তির বাবা আবুল বাশার হাজারী হত্যা মামলা করেছেন। ছয় মাস আগে সবুজকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়িতে থাকা শুরু করেছিলেন জেসমিন। সবুজের খোঁজে অভিযান চলছে।

জেসমিনের গ্রামের বাড়ি ভোলার কাঁঠালিয়া গ্রামে। তার মা-বাবা সাভারে থাকেন। তার বাবা আবুল বাশার ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালান। দুই ভাই, তিন বোনের মধ্যে জেসমিন সবার বড়। ময়নাতদন্তের পরে গতকাল জেসমিনের লাশ ভোলায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত