ধর্ষণের ভিডিও করে লাগাতার ধর্ষণ, স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:২৩

জাগরণীয়া ডেস্ক

ধর্ষণের ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দেবার ভয় দফায় দফায় ধর্ষণ এবং ধর্ষকদের অব্যাহত হুমকিতে ভীত হয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে রহিমা আক্তার সোনিয়া নামে নবম শ্রেণির এক ছাত্রী। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের কালারাম জোত গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনায় স্থানীয় রাজন ও আতিককে অভিযুক্ত করে সোনিয়ার পরিবার থানায় ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগ দিয়েছে। তবে ১২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়নি। ১১ অক্টোবর (বুধবার) ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে সোনিয়ার মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত ধর্ষক রাজন ও আতিক গা-ঢাকা দিয়েছে। তাদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেছেন স্থানীয় অধিবাসী ও শিক্ষার্থীরা।

অভিযুক্ত রাজন তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওয়ার্ডবয় এবং আতিক একটি মোবাইল ব্যাংকি কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট।

এলাকাবাসী ও স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে, তেঁতুলিয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের কালারাম জোত গ্রামের পাথর শ্রমিক জাহিরুল ইসলামের মেয়ে সোনিয়া কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা স্কুল ও কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। তিন মাস আগে মা সেলিনা বেগমের চিকিৎসার জন্য ওষুধ দেওয়ার কথা বলে সোনিয়াকে একটি বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে রাজন ও আতিক। এ সময় তারা ধর্ষণের দৃশ্য ভিডিও করে রাখে। ফেসবুক ও অনলাইনে সেই ভিডিও প্রচারের ভয় দেখিয়ে তারা সোনিয়াকে দফায় দফায় ধর্ষণ করে। গত ৯ অক্টোবর (সোমবার) সোনিয়া তার মা সেলিনা বেগম ও মামা ফারুক হোসেনকে ধর্ষণ ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কথা জানায়। ফারুক হোসেন সোমবার রাতেই ধর্ষক রাজন ও আতিকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে তাদের দেখা করতে বলেন। বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় পরদিন ১০ অক্টোবর (মঙ্গলবার) সকালে সোনিয়া কোচিংয়ে যাওয়ার সময় পথে তাকে আবারও ভয় দেখায় দুই ধর্ষক। অসহায় ও ভীত সোনিয়া কোচিংয়ে না গিয়ে বাড়ি ফিরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

সোনিয়ার মামা ফারুক হোসেন বলেন, ‘সোনিয়ার কাছ থেকে ধর্ষণের কথা জানতে পেরে আমি রাজন ও আতিককে ফোন করে দেখা করতে বলি। তাদের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলি। তার পরও ওকে (সোনিয়া) হুমকি দেওয়া হয়। ব্ল্যাকমেইলিংয়ের হাত থেকে বাঁচতেই সোনিয়া আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।

সোনিয়ার বাবা জাহিরুল ইসলাম বলেন, ১১ অক্টোবর (বুধবার) রাতে ধর্ষণ এবং আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে রাজন ও আতিকের নামে তেঁতুলিয়া থানায় মামলা করতে যাই। কিন্তু পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ডের কথা কথা বলে এ মামলা রেকর্ড করেনি। বলেছে, ময়নাতদন্ত রিপোর্টের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তেঁতুলিয়া থানা পুলিশের ওসি সরেস চন্দ্র বলেন, ‘পরিবারের কাছ থেকে সোনিয়ার আত্মহত্যার খবর জেনে একটি ইউডি মামলা রেকর্ড করা হয়। অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও আমরা মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠাই। তাদের অভিযোগ পেয়েছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তেঁতুলিয়া কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা স্কুল ও কলেজের শিক্ষক নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘সোনিয়া ধর্ষকদের কাছ থেকে বাঁচার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু পরেনি। আমরা এর উপযুক্ত বিচার দাবি করি।’

সোনিয়ার প্রতিবেশী ও সাবেক স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে উত্তরের শান্তিপূর্ণ উপজেলা সদর তেঁতুলিয়া। এখানে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের যথাযথ শাস্তি চাই। অসহায় মেয়েটা তো চলে গেল, তবে উপযুক্ত বিচার পেলে দেশে যে আইন আছে, বিচার আছে- এই সান্ত্বনাটুকু পাব।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত