নারী ধর্ষণ সম্পর্কিত সকল ধারা ও শাস্তি

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:২৫

অনলাইন ডেস্ক

ধারা
নারী ধর্ষণঃ
যে ব্যক্তি, অতঃপর ব্যতিক্রান্ত ক্ষেত্রে ব্যতিরেকে নিম্নোক্ত পাঁচ প্রকার বর্ণনাধীন যেকোন অবস্থায় কোন নারীর সহিত যৌনসহবাস করে, সেই ব্যক্তি ‘নারী ধর্ষণ’ করে বলিয়া গণ্য হইবে।

প্রথমত, তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে।
দ্বিতীয়ত, তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে।
তৃতীয়ত, তাহার সম্মতিক্রমে, যেইক্ষেত্রে তাহাকে মৃত্যু বা আঘাতের ভয় প্রদর্শন করিয়া তাহার সম্মতি আদায় করা হয়।
চতুর্থ, তাহার সম্মতিক্রমে, যেইক্ষেত্রে লোকটি জানে যে সে তাহার স্বামী নহে এবং সে (নারীটি) এই বিশ্বাসে সম্মতি দান করে যে, সে (পুরুষটি) এমন কোন লোক যাহার সহিত সে আইনানুগভাবে বিবাহিত অথবা সে নিজেকে তাহার সহিত আইনানুগভাবে বিবাহিত বলিয়া বিশ্বাস করে।
পঞ্চমত, তাহার সম্মতিসহকারে বা ব্যতিরেকে, যেইক্ষেত্রে সে চৌদ্দ বৎসরের কম বয়স্কা হয়।

ব্যাখ্যাঃ অনুপ্রবেশই নারীধর্ষণের অপরাধরূপে গণ্য হইবার যোগ্য যৌনসহবাস অনুষ্ঠানের নিমিত্ত যথেষ্ট বিবেচিত হইবে।

ব্যতিক্রমঃ কোন পুরুষ কর্তৃক তাহার স্ত্রীর সহিত, যৌনসহবাস-স্ত্রীর বয়স তের বৎসরের কম না হইলে নারী ধর্ষণ বলিয়া গণ্য হইবে না।

ভাষ্য
বিশ্লেষণঃ এই ধারায় নারী ধর্ষণের সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছে। কোন নারীকে তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা তাহার সম্মতি ব্যতীত বা ভয় দেখাইয়া সম্মতি আদায় করিয়া বা অন্যায়ভাবে তাহাকে বুঝাইয়া যে সে স্ত্রী চৌদ্দ বৎসরের কম বয়স্কা বালিকাকে তাহার সম্মতি লইয়া যৌনসহবাস করিলে উহা নারীধর্ষণ নামে পরিচিত হয়।

সূত্রঃ নারীধর্ষণ বলিতে নারীর বিনা অনুমতিতে বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনসঙ্গম করা বুঝায়। ইচ্ছার বিরুদ্ধে বলিতে প্রত্যক্ষ আগ্রহের অভাব বুঝায়। নিদ্রিত অবস্থায় কোন নারীর সহিত মিলিত হইলে সেই মিলনকে তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিলন বুঝায়। জড়বুদ্ধিসম্পন্ন কোন নারীকে তাহার বুদ্ধির দৌর্বল্যের সুযোগ লইয়া যৌনসঙ্গম করা তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিলন বলা যাইতে পারে। সম্মতি ব্যতিরেকে বলিতে স্বাধীনভাবে অনুমতি না দেওয়া বুঝায়। মৃত্যুর ভয়ে বা আঘাতের ভয়ে সম্মতি দেওয়াকে সম্মতি বলা চলে না। কোন ব্যক্তিকে স্বামী জানিয়া তাহাকে সঙ্গমে সম্মতি দিলে এবং তাহা উক্ত ব্যক্তির মিথ্যা বর্ণনার দ্বারা অভিভূত হইয়া প্রদান করিলে উক্ত সম্মতিকে সম্মতি বলা যায় না।

ধারা
নারী ধর্ষণের শাস্তি
যে ব্যক্তি নারী ধর্ষণ করে, সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে বা যেকোন বর্ণনা কারাদন্ডে-যাহার মেয়াদ দশ বৎসর পর্যন্ত হইতে পারে-দন্ডিত হইবে এবং তদুপরি অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবে, যদি না ধর্ষিতা নারীটি তাহার নিজ স্ত্রী হয় এবং সে বার বৎসরের কম বয়স্কা না হয়। শেষোক্ত ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি যেকোন বর্ণনার কারাদন্ডে-যাহার মেয়াদ দুই বৎসর পর্যন্ত হইতে পারে বা অর্থদন্ডে বা উভয়বিধ দন্ডে দন্ডিত হইবে।

ভাষ্য
বিশ্লেষণঃ এই ধারায় ধর্ষণের শাস্তির বর্ণনা করা হইয়াছে।

নজির
পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে যেখানে ধর্ষণের অভিযোগ আছে সেখানে উচ্চতর পুলিশ অফিসারের নিকট ইনকোয়ারি দেওয়া ঠিক নহে। [৩২ ডিএলআর ২৯৮]

ধর্ষিতা নারীর একক স্বাক্ষী ক্ষেত্রবিশেষে গ্রহণ যোগ্য হইতে পারে। [১৮ ডিএলআর ৬৭ ডব্লিউপি]

নারীটি যেখানে বারাঙ্গনা সেখানে তাহার উপর ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ করিতে হইলে তাহার উপর একক সাক্ষ্য যথেষ্ট নহে। [১৫ ডিএলআর ১১৫ ডব্লিউপি]

নারী ধর্ষণ
নারী ধর্ষণের অপরাধ সংঘটনের জন্য বীর্যপাতের জন্য পূর্ণাঙ্গ লিঙ্গ অনুপ্রবেশ অথবা সতীচ্ছদ ছিন্ন করিবার আবশ্যক হয় না। Valua আথবা Pudendum-এর Lalia Majora-এর মধ্যে বীর্যপাত করিয়া অথবা না করিয়া লিঙ্গ অনুপ্রবেশ করিলেই অথবা অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা করিলে তাহা নারী ধর্ষণ হিসাবে গণ্য হয়। [১৯৬১ (১) ক্রিএলজে ৬৮৯]

সম্মতি
শিকারগ্রস্থ ব্যক্তির বয়স ঘটনার দিনে যে ১৭ বৎসরের কম ছিল তাহা প্রমাণিত হয় নাই এবং ইহাও দেখা গেল যে, তাহার সম্মতি ছিল কাজেই ৩৭৬ ধারা অধীনে কোন অপরাধ হয় নাই বলিয়া আসামীকে খালাস দেওয়া হইল। [পিএলডি ১৯৮২ করাচী. ২৪০]

বাদীনীর শরীরে কোন জখমের চিহ্ন পাওয়া যায় নাই। এবং সতীচ্ছদ ছিন্ন অনেক পূর্বে হইয়াছে বলিয়া দেখা গেল এবং বাদীর সম্মতি ছিলো বলিয়া প্রমাণ পাওয়া গিয়াছে। বাদীনীর বয়স ১৭/১৮ বৎসর ছিল এবং প্রাথমিক তথ্যবিবরণী দাখিলে যে বিলম্ব হইয়াছে তাহার কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া হয় নাই। আসামীকে খালাস দেওয়া হইয়াছে। [১৯৮৩ সিআরআইএলজে ১৯৬]

সম্মতি সম্পর্কে অনুমান 
সম্মতির ঘটনা বিবেচনার পূর্বে আসামীকে মেয়ের সম্মতি রহিয়াছে মর্মে প্রতিরক্ষা গ্রহণ করিবার আবশ্যক হয় না। উহা স্বীকার হইবার সম্ভাবনায় অপরাধের জন্য শঅস্তি হইতে পারে অথবা লজ্জাজনক কর্মটি জানাজানি হইয়া গেলে তাহার নিজেরও লজ্জিত হইবার বিষটি জড়িত বলিয়া আসামী উক্ত প্রতিরক্ষা প্রথমে নাও গ্রহণ করিতে পারে। কাজেই যেইক্ষেত্রে মেয়ের সম্মতি রহিয়াছে মর্মে প্রতিরক্ষা গ্রহণ করা হয় না কিন্তু অভিযোগকারীর দেহে কোন জখম থাকে না সেইক্ষেত্রে বাদীনীকে ধর্ষণ করা মর্মে ঘটনা প্রমাণিত হয় না। [১৯৭০ পি সিআরআই এলজে ১২২১]

বাদীনীর সাক্ষ্য হইতেই ইহা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, তিনি যৌনসম্ভোগে বাছবিচারহীন এবং যদিও তিনি ২৪ ঘন্টার মধ্যে একের পর এক করিয়া পাঁচ ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষিতা হইয়াছেন তবুও তিনি উক্ত ঘটনার অভিযোগ কাহারও নিকট করেন নাই। ইহাতে সিদ্ধান্ত হয় যে, যাহারা তাহাদের কাম-লালসা তাহার উপর পুরণ করিয়াছেন তাহারা তাহা তাহার সম্মলি লইয়া করিয়াছেন। [১৯৬২ জাল এলজে ৮২৫]

কোন বয়স্কা  নারীকে ধর্ষণ করা হইয়াছে মর্মে অভিযোগ তোলা হইলে তাহাকে ইহা প্রমাণ করিতে হইবে যে, তাহার সম্মতি ব্যতীত অথবা তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাহার সহিত যৌনসহবাস করা হইয়াছে। আসামীকে ইহা প্রমাণ করিবার আবশ্যক নাই যে, উক্ত নারীর সম্মতি লইয়া যৌনসহবাস করা হইয়াছে। অভিযোগকারী অভিযোগ তুলিল যে, আসামীর হাতে অস্ত্র ছিলো এবং অভিযোগকারীর চিৎকার সত্বেও তাহাকে হত্মা করিবার ভয় দেখানো হইয়াছিলো। তাহার চিৎকার সম্পর্কে কোন সাক্ষ্য পাওয়া যায় নাই। অথবা আসামীর হাতে যে ছুড়ি ছিল তাহা সম্পর্কে অভিযোগপত্রেও কিছু বলা হয় নাই। মেডিকেল সাক্ষ্য দ্বারাও ইহা প্রমাণিত হয় নাই যে, অভিযোগকারীর গুপ্তাঙ্গে কোন যখম আছে কি-না। আসামীর মাথায় যখম ব্যতীত তাহার অন্য কোথাও কোন যখম ছিলো না। অভিযোগকারীর স্বামী আসিয়া পড়ায় আসামী পালাইবার সময় উক্ত মাথার যখম পাইয়াছিল। এই ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হয় যে, পরিপার্শ্বিক অবস্থা হইতে ইহা প্রমাণিত হয় যে, অভিযোগকারীর সম্মতি লইয়া যৌনসহবাস করা হইয়াছে। [(১৯৬১) ২ গুজ. এলআর ২৫৬]

সম্মতি লইয়া যৌনসহবাস
ইহা অবশ্যই স্মরণ রাখিতে হইবে যে, সম্মতি এবং আত্মসমর্পণ এক জিনিস নহে। প্রতিটি সম্মতিতেই আত্মসমর্পণ থাকে কিন্তু উহা দ্বারা কিছুতেই বুঝায় না যে শুধুমাত্র আত্মসমর্পণ হইলেই সম্মতি ছিল। যে ব্যক্তি কৃতকর্মের প্রকৃতি বুঝেন না তিনি আত্মসমর্পণ করিলে তাহা দ্বারা সম্মতি দেওয়া হইয়াছে বলা যায় না। [পিএলডি ১৯৫৯ লাহোর ৩৮]

কাজেই সংশ্লিষ্ট কর্মের প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞাত থাকিয়া সচেতনভাবে সম্মতি দিলেই তাহা সম্মতি হিসাবে গণ্য হয়। মদের প্রভাবে সম্মতি দেওয়া হয় অথবা অপ্রকৃতিস্থ  নারী যে সম্মতি দেয় তাহা আইনের দৃষ্টিতে কোন সম্মতি হিসাবে গণ্য হয় না। [পিএল ১৯৫৯ লাহোর ৩৮]

মেয়ের কুমারিত্ব
মেডিকেল পরিক্ষায় দেখা গেল যে, ১০ বৎসরের মেয়ের সতীচ্ছদ ছিন্ন হইয়াছে। উক্ত মেয়েটি যৌনসহবাসে অভ্যস্ত ছিলো মর্মে ঘটনা কদাচিৎ বিশ্বাসযোগ্য। অপরপক্ষে ডাক্তার মত প্রকাশ করেন যে, ধর্ষণের ফলেই উক্ত মেয়ের সতীচ্ছদ ছিন্ন হইয়াছে। এই ক্ষেত্রে বাদীর মামলা সমর্থন করা যায়। [১৯৮৫পি সিআরএলজে ১১৪২]

মেয়ের বয়স
শিকারগ্রস্থ ব্যক্তির নাবালকত্ব সম্পর্কে ঘটনা বাদী প্রমাণ করিতে ব্যর্থ হইলে আসামী উহার সুবিধা পাইবার অধিকারী। [পিএলডি ১৯৮০ পেস ১৩৯]

বয়স প্রমাণ
মেয়ের পিতামহ মেয়ের বয়স সম্পর্কে যে সাক্ষ্য দেন তাহা মেডিকেল সাক্ষ্য দ্বারা সমর্থিত হইলে আদালত উহার উপর ভিত্তি করিয়া আসামীকে শাস্তি দিতে পারে। [১৯৬৮ পি. সিআরআই ১৭৪৩]

কাজেই কোন মেয়ের বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাহার দাঁতের বৃদ্ধি, Public and auxiliary haip, বুকের দুধ বৃদ্ধি, উচ্চতা এবং ওজন প্রাসঙ্গিক বিবেচ্য বিষয় হিসাবে গণ্য হয়। বয়স বির্ধারণের জন্য হাড় পরীক্ষা (Ossification) সুনিশ্চিত পরীক্ষা হিসাবে গণ্য হইতে পারে কিন্তু আদালত ডাক্তারের হাড় পরীক্ষা ব্যতীত উপরোক্ত বিষয়ের উপর নির্ভর করিয়া প্রদত্ত মতের উপর ভিত্তি করিয়া কাজ করিতে পারে। [১৯৬২ (১) এলজে ৬৫০]

এই ক্ষেত্রে ডাক্তারকে মেয়ের বয়স নির্ধারণের ব্যাপারে তাহার কারণ বর্ণনা করিতে হয়। তিনি যদি উহা না করেন তবে তাহার সাক্ষ্যের কোন মূ্ল্য নাই। [পিএলডি ১৯৬২ করাচী ৬৮৪] 

এই ক্ষেত্রে ডাক্তারকে তাহার মতামতের কারণ দর্শাইবার জন্যে প্রশ্ন করিবার আবশ্যক পড়ে না। কারণ না দর্শাইবার ফলে যে সন্দেহের সৃষ্টি হইয়াছে তাহার সুবিধা পাইতে অধিকারী। [পিএলডি ১৯৮০ লাহোর ১৩৯]

অনুপ্রবেশ
আংশিক অনুপ্রবেশ যদিও সতীচ্ছদ ছিন্ন করিতে যথেষ্ট হিসেবে গণ্য হয় নাতবুও উহা ৩৭৬ ধারার অধীনে পূর্ণাঙ্গ অনুপ্রবেশ হিসেবে গণ্য হয় এবং অপরাধটি ধর্ষণ করিবার প্রচেষ্টা হিসাবে গণ্য না হইয়া ধর্ষণের অপরাধ হিসাবে গণ্য হয়। [এআইআর ১৯৬২ কল. ৬৪১]

অনুপ্রবেশের প্রমাণ 
নারী ডাক্তার সতীচ্ছদ রক্তিম অবস্থায় দেখিতে পায়। রাসায়নিক পরীক্ষায় আসামীর underwear এবং শিকারগ্রস্থ ব্যক্তির সেলোয়ারে বির্যের দাগ পাওয়া গিয়াছে। সতীচ্ছদে যে swab ছিল তাহাতেও বীর্য পাওয়া গিয়াছিল। এই পারিপার্শ্বিক অবস্থায় ইহা অতি পরিস্কার যে, অনুপ্রবেশ করান হইয়াছিল। [এআইআর ১৯৬২ কল. ৬৪১]

যখমের উপস্থিতি অথবা অনুপস্থিতি অবশ্যই অন্যান্য ঘটনার সাথে বিবেচনা করিতে হয়। স্ত্রী-যোনিতে যখম হইলেই উহা আবশ্যকভাবে অথবা অপরিবর্তনীয়ভাবে প্রমাণ করে না যে, ধর্ষণ করা হইয়াছে। অপরপক্ষে, গুপ্তাঙ্গে কোন যখম না থাকিলে ইহা প্রমাণিত হয় না যে, বাদীনীকে ধর্ষণ করা হয় নাই। ঘটনা হইতে ইহা সহজেই ব্যাখ্যা করা যায় যে অভিযোগকারিণকে পূর্বে intercousre করা হইয়াছে। [১৮ ডিএলআর ডব্লিউপি ৬৭]

পূর্ণাঙ্গ কর্মের আবশ্যক হয় না
নারী ধর্ষণের অপরাধের ক্ষেত্রে কৌশলগত অনুপ্রবেশকেও বুঝান হইয়াছে বলিয়া অতি অল্প অনুপ্রবেশ করা হইলেও তাহা যথেষ্ট হিসাবে গণ্য হইবে। যৌনসহবাসের পূর্ণাঙ্গ কর্মের আবশ্যক হয় না। [এআইআর ১৯৬০ মাদ. ৩০৮]

বাদীনীর সাক্ষ্যের সমর্থন প্রয়োজন কি-না
নারী ধর্ষণের মামলায় বাদীনীর সাক্ষ্য আদালত প্রথাগতভাবে সন্দেহের সাথে গ্রহণ করিয়া থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পূর্ণ বয়স্কা  নারীর একক সাক্ষ্য যথেষ্ট হিসাবে গৃহীত হয় না। উহা বিশ্বাসযোগ্য করিবার জন্য উহাতে স্বাধীন সমর্থনীয় সাক্ষ্যের আবশ্যক হয়। [পিএডি ১৯৬৭ এস সি ৩২৬]

বয়স্কা বাদীনী
বাদীনীর বয়স ১৬/১৭ বৎসর হইবার কারণে তাহাকে সম্মতি দিবার নিচের বয়সের লোক হিসেবে গণ্য করা যায় না। এই ক্ষেত্রে সমর্থনের বিষয়টি অতি আবশ্যক এবং উক্ত অসমর্থনীয় সাক্ষ্য স্বাধীন মাধ্যম হইতে আসা আবশ্যক। উহার অনুপুস্থিতিতে আসামীকে খালাস দেওয়া যায়। [পিএলডি ১৯৮২ করাচী ২৪০]

বাদীনী বেশ্যা হইলেঃ কোন  নারী বেশ্যাবৃত্তি পরিচালনা করিবার সময় তাহার অনুমতি ব্যতীত তাহার সহিত কোন লোক যৌনসহবাস করা হইয়াছে বলিয়া অভিযোগ তোলা হইলে উহা অত্যন্ত শক্তিশালী সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করিতে হয়। এই ক্ষেত্রে বাদীনীর নিজের বর্ণনা ততটা মূল্য বহন করে না। [১৫ ডিএলআর (ডব্লিউপি) ১১৫]

বাদীনীর বর্ণনার সমর্থন না থাকা সত্ত্বেও উহার ওপর ভিত্তি করিয়া শাস্তি
নারীধর্ষণের মামলায় বাদীনী যে সাক্ষ্য দেয় তাহা অপরাধের সহযোগীর সাক্ষ্যের সমান পর্যায় হিসাবে গণ্য হয় না। অপরাধের সহযোগী স্বেচ্ছায় আপরাধ সংঘটনে অপরের সাথে যোগ দেয়। নারী ধর্ষণের মামলায় বাদীনী অপরাধী নহে তিনি একজন অপরাধের শিকার। কাজেই অপরাধের সহযোগী সাক্ষ্য নারী ধর্ষণের বাদীনীর সাক্ষ্য হইতে ভিন্ন এবং উভয়ের সাক্ষ্যকে একই পদমর্যাদায় বসান ঠিক নহে। [১৯৫৮ এসসি ৭৪৯]

কাজেই নারী ধর্ষণের মামলায় বাদীনীর সাক্ষ্যের সমর্থন সকল সময় অপরিহার্য নহে। সমর্থনের নিয়মটি আদালতকে দিকনির্দেশ করে মাত্র উহা কোন আইনগত অধিকারের নিয়ম নহে। [পিএলডি ১৯৭৯ করাচী ১৪৭]

অভিযোগকারীর একক সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করিয়া আসামীকে শাস্তি দেওয়া যায় কি-না তাহা নির্ভর করে প্রতিটি মামলার পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপরে। এবং এই ক্ষেত্রে এই বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখিতে হয়। [পিএলডি ১৯৫০ লাহোর. ১৮৯]

ভিকটিমের সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য হইলে তাহার একক সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করিয়া আসামীকে দন্ডবিধির ৩৭৬ ধারা অপরাধের জন্য শাস্তি প্রদান করা যাইতে পারে। [Samsul Haque Vs. State; 52 DLR 255]

অপরাধের শিকার কোন শিশু হইলে তাহার সাক্ষ্য
কোন নাবালক বাদীনীর যথেষ্ট বোধশক্তি রহিয়াছে মর্মে সন্তুষ্ট হইয়া ৩৭৬ ধারার অধীনের মামলার ক্ষেত্রে, আদালত তাহার সাক্ষ্য গ্রহণ করিলে। এই ক্ষেত্রে তাহার শপথহীন সাক্ষ্য স্বীকৃত সাক্ষ্য হিসাবে গণ্য হয়। [এআইআর ১৯৬০ মধ্য প্র.৫৯]

অন্যান্য সাক্ষ্যের মাধ্যমে নাবালক বাদীনীর সাক্ষ্য সমর্থিত হইলে
১০ বৎসরেরও কম বয়সের বাদীনীর সাক্ষ্য তাহার মাতার সাক্ষ্য দ্বারা সমর্থিত হইল। বাদীনী এবং তাহার মাতা যে সাক্ষ্য দিয়াছেন তাহা অবিশ্বাস করিবার কোন কারণ নাই। শুধুমাত্র একজন সাক্ষী আসামীর অনুকূলে সাক্ষ্য দিয়াছেন মর্মে ঘটনার উপর ভিত্তি করিয়া আসামীকে কালাস দেওয়া যায় না। [১৯৮৪ পিসিআর এলজে ১১৪২]

মেডিকেল পরীক্ষা
নারীধর্ষণের অপরাধ মেডিকেল অফিসার এবং রাসায়নিক পরীক্ষার পরীক্ষকের সাক্ষ্যের মাধ্যমে প্রমাণিত হইতে পারে। [এনএলআর ১৯৮১ সিআরআই ১০৩]

সতীচ্ছদ ছিন্ন
অপ্লবয়স্কা শিশুদের সতীচ্ছদ Canal-এর অনেক উচ্চে থাকে বলিয়া উহা যৌনসহবাসে সাধারণতঃ ছিন্ন হয় না। কিন্তু উহা লাল হইয়া যাইতে পারে। বাদীনীর Valva মেডিকেল পরীক্ষায় দেখা গেল যে, উহা লাল হইয়া গিয়াছে। ইহাতে সিদ্ধান্ত হয় যে, তাহাকে ধর্ষণ করা হইয়াছে। কাজেই ইহা বলা যায় না যে, অপরাধের শিকারগ্রস্থ নাবালিকার সতীচ্ছদ ছিন্ন হয় নাই বলিয়া তাহাকে ধর্ষণ করা হয় নাই। [১৯৮৩ পি. সিআরআই এল জে ৯৬ (এসসি এজি এন্ড কে)]

আসামীর মেডিকেল পরীক্ষা
ইহা সর্বজনীন নীতি হিসাবে গণ্য হইতে পারে না যে, নারীধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে বাদীনীকে অবশ্যই আসামী যৌনসহবাস করিতে সমর্থ কি-না অথবা তাহার শারীরিক দৌর্বল্য আছে কি-না তাহা মেডিকেল পরীক্ষার মাধ্যমে পরীক্ষা করাইয়া দেখাইতে হবে। [১৯৬৩ পি. সিআরআই এল জে ১৯৩৩]

নারীধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে আসামীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেডিকেল পরীক্ষা করা উচিত। [এআইআর ১৯৫৪ উড়িষ্যা ৩৩ (ডিবি)]

প্রমাণ
নারীধর্ষণের অভিযোগ করা খুবই সহজ কিন্তু উহা প্রমাণ করা খুবই কঠিন। নারী ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে উপস্থাপিত সাক্ষ্যসমূহ অত্যন্ত সতর্কতার সহিত বিবেচনা করিতে হয় এবং দেখিতে হয় যে, উক্ত সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য কি-না অথবা উহা আসামীর বিরুদ্ধে সন্দেহাতীভাবে প্রমাণিত হইয়াছে কি-না। [১৯৮৪ পিসিআরআই এলজে ২৩৩২]

সাক্ষ্যের ক্ষেত্রে উহার পরিমান বিবেচ্য বিষয় হিসাবে গণ্য না হইয়া উহার গুণ বিবেচ্য বিষয় হিসাবে গণ্য হয়। শুধুমাত্র একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করিয়াও আসামীকে শাস্তি দেওয়া যায়। তবে শর্ত থাকে যে, উহা বিশ্বাসযোগ্য হওয়া আবশ্যক। [এনএলআর ১৯৮৩ এসসি জে ৩১৯]

অপরাধের শিকারগ্রস্ত নাবালক মেয়েকে আদালতে উপস্থিত করা না হইলে
ধর্ষণকৃত মেয়েটিকে আদালতে উপস্থিত না করাইবার ফলে আসামী যুক্তি তুলিতে পারেন যে, অপরাধকর্মে মেয়েটির অনুমতি ছিল। কিন্তু ৮ অথবা ৯ বৎসরের মেয়ের অনুমতি আসামীর কোন উপকারে আসে না। কাজেই বাদীনীর মাতার সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করিয়া আসামীকে শাস্তি দেওয়া যায়। [পিএলডি ১৯৭৮ লাহোর. ৯৬২]

মিথ্যাভাবে জড়ান
আমাদের সমাজে কোন  নারীকে মানহানিকর অভিযোগ আরোপ করিয়া অসম্মান করিতে কেহই চায় না। মানুষ তাহাদের মানসম্মান রক্ষার জন্য খুনাখুনি পর্যন্ত করে। [পিএলডি ১৯৭৮ লাহোর ৯৬২]

কাজেই আসামীকে মিথ্যাভাবে প্রকৃত আসামীদের সাথে জড়ান হইয়াছে মর্মে আসামীপক্ষ যে দাবি তোলা হয় তাহার উপর আদালত সাধারণত নির্ভর করে না। [১৯৮০পি সিআরআই এলজে ২৩]

সাক্ষের মধ্যে সামান্য তারতম্য
সাক্ষের মধ্যে সামান্য তারতম্য পরিলক্ষিত হইলে তাহা মামলাটিকে মিথ্যা প্রমাণ করে না। এমনকি সত্যবাদী সাক্ষ্যের ক্ষেত্রেও উহা ঘটিতে পারে। কারণ প্রতিটি লোকের পর্যবেক্ষণ, অনুধাবন এবং বর্ণনা-শক্তি এক রকম নহে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রে সাক্ষ্য একই রকম দেখা গেলে কম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সাক্ষ্যের মধ্যে তারতম্য পরিলক্ষিত হইলে তাহা কোন ক্ষতির কারণ সৃষ্টি করে না। [১৯৮৩ পিসিআরআই এলজে ৭৬১]

অপরাধীর শিকারগ্রস্ত ব্যক্তির সাথে সাক্ষীর আত্মীয়তা থাকিলে
বাদীর সাক্ষীর সাথে অপরাধের শিকারগ্রস্ত ব্যক্তির আত্মীয়তা ছিলো কিন্তু আসামীর সহিত তাহার কোন শত্রুতা ছিলো না অথবা মিথ্যাভাবে আসামীকে অপরাধে জড়ানোর জন্য সাক্ষীর কোন ইচ্ছা ছিলো না। এইরূপ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা যায় এবং এই ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আত্মীয়তার ঘটনা সাক্ষীর অযোগ্যতা হিসাবে গণ্য হয় না। [১৯৮৩ পি সিআর এলজে ৭৬১]

প্রাথমিক তথ্যবিবরণী দাখিলে বিলম্ব
অপরাধ সংঘটনের তিন দিন পরে অভিযোগকারী প্রাথমিক তথ্যবিবরণীর দাখিল করেন এবং উহা দাখিলে বিলম্বের কোন কারণ উল্লেখ করেন নাই। এই ক্ষেত্রে বাদীর মামলা সন্দেহমূলক হইয়া পড়ে। [পিএলডি ১৯৮০ পেশ. ১৩৯]

প্রাথমিক তথ্যাবিবরণী দাখিলে বিলম্ব করা হয়। বাদীনীর সাক্ষ্যের সাথে মেডিকেল সাক্ষ্যের পার্থক্য সন্দেহের সুবিধা দেওয়া হয়। [১৯৭৬ পিসিআর এলজে ৩৬৪]

বাদীনী ভালমন্দ বুঝিবার বয়সে পরিণত হইয়াছেন। তিনি কুমারী ছিলেন এবং তিনি যৌনসহবাসে অভ্যস্ত হিসাবে দেখা গেল। ইহাতে মনে হয় যে, তাহার সম্মতি ছিল। আসামীকে সন্দেহের সুবিধা দেওয়া হয়। [১৯৭৬ পি. সিআরআই এলজে ৩৬৪]

পারিপর্শ্বিক সাক্ষ্য
নারী ধর্ষণের প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করিয়া থাকে। [১৯৮৪ পিএলজে ২৩৩৭]

শাস্তি আদেশ
৩৭৬ ধারার অধীনের শাস্তি-যাবজ্জীন কারাদন্ড অথবা ঘটনা অনুসারে উহা ১০ বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড হইতে পারে। ইহা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে প্রতিটি মামলার পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর এবং বিচার আদালতের ন্যায়পরায়ণমূলক সুবিবেচনার উপরে। [এনএলআর ১৯৮১ সিআরআই ৪৭১ (ডিবি)]

কয়েকজন  নারী সশস্ত্র ব্যক্তিদের দ্বারা পশুর মত ধর্ষিতা হইল এবং তাহাদের কবল হইতে একটি কুমারী মেয়েও রক্ষা পায় নাই। এই ক্ষেত্রে শাস্তির আদেশ বৃদ্ধি করিয়া ৫ বৎসরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয় এবং ৩০০০ টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়। [এনএলআর ১৯৮১ সিআর ৪৭১]

ধর্ষণ করিয়া খুন
অল্প বয়সের কোন মেয়েকে পূর্ণবয়স্ক কোন লোক পশুর মত ধর্ষণ করিল এবং পরিশেষে মেয়েটির মৃত্যু হইল। এই ক্ষেত্রে অপরাধের জঘন্যতা বিবেচনায় আনিলে সাত বৎসরের সশ্রম কারাদন্ড অত্যাধিক শাস্তি হিসেবে গণ্য হয় না। [১৯৬৮ পিসিআরআই. এল জে ৭৯৯ (ডিবি)]

বিচারে বিলম্ব
বিচারের ক্ষেত্রে অনেক বিলম্ব করায় উহাকে অপরাধের পরিমাণ লাঘবকারী বিষয় হিসাবে গণ্য করা যায়। কাজেই আসামীর শাস্তির আদেশ কমাইয়া পাঁচ বৎসর সশ্রম কারাদন্ডে পরিণত করা হয়। [পিএলডি ১৯৭৯ লাহোর ১৫৫]

প্রমাণ
এই ধারার অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত করিতে হইলে নিম্নবর্ণিত তথ্যাবলী প্রমাণ করিতে হয়ঃ
১। অভিযুক্ত ব্যক্তি কোন নারীর সহিত যৌনসঙ্গম করিয়াছিলেন।
২। উক্ত যৌনসঙ্গম উক্ত নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভয় অথবা আঘাতের ভিত্তিতে সম্মতি আদায় করিয়া বা মিথ্যাভাবে তাহাকে স্ত্রী বলিয়া বুঝাইয়া অথবা তাহার বয়স চৌদ্দ বৎসরের কম হইলে তাহার সম্মতি লইয়া বা সম্মতি ব্যতিরেকে করা হইয়াছিল।

কার্যক্রম
[প্রথম অনুচ্ছেদ]
আমলযোগ্য নহেঃ সমনঃ জামিনযোগ্যঃ আপোসযোগ্য নহেঃ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিচারযোগ্য।

চার্জ
আমি (বিচারক ও ক্ষমতাসহ আদালতের নাম ইত্যাদি) আসামী/আসামীদের নাম.....আপনার/আপনাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গঠন করিতেছি যে, আপনি/আপনারা....তারিখে.....টার সময় অমুক স্থানে আপনার ১২ বৎসরের কম বয়স্কা নহেন এমন স্ত্রী অমুককে ধর্ষণ করিয়াছেন, যাহা দন্ডবিধির ৩৭৬ ধারামতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং আমার আদালতে বিচার্য।

কার্যক্রম
[দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ]
আমলযোগ্য নহেঃ সমনঃ জামিনযোগ্যঃ আপোসযোগ্য নহেঃ সরকারের প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিচারযোগ্য।

চার্জ
আমি (বিচারক ও ক্ষমতাসহ আদালতের নাম ইত্যাদি) আসামী/আসামীদের নাম.....আপনার/আপনাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গঠন করিতেছি যে, আপনি/আপনারা....তারিখে.....টার সময় অমুক স্থানে আপনার ১২ বৎসরের কম বয়স্কা স্ত্রী অমুককে ধর্ষণ করিয়াছেন, যাহা দন্ডবিধির ৩৭৬ ধারামতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং আমার আদালতে বিচার্য।

কার্যক্রম
[তৃতীয় অনুচ্ছেদ]
আমলযোগ্যঃ ওয়ান্টঃ জামিনযোগ্য নহেঃ আপোসযোগ্য নহেঃ সরকার প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিচারযোগ্য।

চার্জ
আমি (বিচারক ও ক্ষমতাসহ আদালতের নাম ইত্যাদি) আসামী/আসামীদের নাম.....আপনার/আপনাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গঠন করিতেছি যে, আপনি/আপনারা....তারিখে.....টার সময় অমুক স্থানে অমুক নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন, যাহা দন্ডবিধির ৩৭৬ ধারামতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং আমার আদালতে বিচার্য।

অস্বাভাবিক অপরাধ সম্পর্কিত ধারা

অস্বাভাবিক অপরাধসমূহ
যে ব্যক্তি, স্বেচ্ছাকৃতভাবে কোন পুরুষ, নারী বা জন্তুর সহিত প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌনসহবাস করে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে বা যেকোন বর্ণনার কারাদন্ডে-যাহার মেয়াদ দশ বৎসর পর্যন্ত হইতে পারে-দন্ডিত হইবে এবং তদুপরি অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবে।

ব্যাখ্যা
অনুপ্রবেশই এই ধারায় বর্ণিত অপরাধরূপে গণ্য হইবার যোগ্য-সহবাস অনুষ্ঠানের নিমিত্ত যথেষ্ট বিবেচিত হইবে।

ভাষ্য
বিশ্লেষণঃ এই ধারায় অস্বাভাবিক অপরাধের শাস্তির বিধান করা হইয়াছে। শাস্তির পরিমান যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা অনূর্ধ্ব দশ বৎসর কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড।

অনুপ্রবেশ হইলেই এই ধারায় অপরাধ হইয়া যায়। তবে ইহা প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধভাবে হইতে হইবে। কোন ব্যক্তি প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে অপর কোন ব্যক্তির সহিত বা নারীর সহিত বা জন্তুর সহিত যৌনসহবাস করে সেই ব্যক্তি এই ধারার শাস্তির অধীনে আসে।

ধারা
ধারা ৩৭৭: Sodomy সমকামিতা-যেকোন ধরনের অনুপ্রবেশ প্রমাণ করিলে এই ধারার অপরাধ গঠিত হয়। [নূর মোহাম্মদ-বনাম-রাষ্ট্র ৪১ ডিএলআর ৩০১]

প্রমাণ
এই ধারার অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত করিতে হইলে নিম্নলিখিত তথ্যাবলী প্রমাণ করিতে হয়ঃ
১। অভিযুক্ত ব্যক্তি কোন পুরুষ, নারী বা জন্তুর সহিত যৌনসহবাস করিয়াছিলেন।
২। ইহা প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে ছিল।
৩। ইহা স্বেচ্ছাকৃতভাবে করা হইয়াছিল।
৪। অনুপ্রবেশ ঘটিয়াছিল।

কার্যক্রম
আমলযোগ্যঃ ওয়ান্টঃ জামিনযোগ্য নহেঃ আপোসযোগ্য নহেঃ সরকার প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিচারযোগ্য।

চার্জ
আমি (বিচারক ও ক্ষমতাসহ আদালতের নাম ইত্যাদি) আসামী/আসামীদের নাম.....আপনার/আপনাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গঠন করিতেছি যে, আপনি/আপনারা....তারিখে.....টার সময় অমুক স্থানে অমুক অমুকের অমুক জন্তুর সহিত প্রাকৃতিক নিয়ম বিরুদ্ধভাবে যৌনসহবাস করিয়াছেন, যাহা দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারামতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং আমার আদালতে বিচার্য।

[অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ গাজী শামছুর রহমান রচিত ‘দণ্ডবিধির ভাষ্য’ বই থেকে হুবহু তুলে দেয়া হয়েছে। বইটি সাধু ভাষায় রচিত]