মশা নগর

প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০১৭, ২১:৫৫

জাগরণীয়া ডেস্ক

আফ্রিকায় প্রতি মিনিটে ম্যালেরিয়ায় ভুগেই মারা যায় অন্তত দুজন শিশু। তাই মশার কামড় থেকে মানুষকে বাঁচাতে সারাদিন কাজ করছে তানজানিয়ার ছোট্ট শহর ‘সিটি অফ মসকুইটো’ অর্থাৎ ‘মশার নগর’।

তানজানিয়ার প্রত্যন্ত এক শহর ইফাকারা। ইফাকার শব্দের অর্থ ‘যেখানে আমি মৃত্যু বরণ করি’। নামেই বোঝা যায় বসবাসের জন্য শহরটি আসলে কেমন। মানুষ যেন সেখানে জীবন উপভোগের কথা, সুখে-স্বাচ্ছ্যন্দে কিছুদিন বাঁচার কথা ভাবতেই পারে না, জন্মের পর থেকে আসল কাজই যেন মশার কামড়ে রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা করা।

সেখানে মশার কবল থেকে মানুষ বাঁচাতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ইফাকারা হেলথ ইনস্টিটিউট (আইএইচআই)। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মশা এবং মশাবাহিত রোগে মৃত্যুহার অনেক কমেছে। কতটা কমেছে তা জানানোর আগে শহরটিতে মশা কত বেশি ছিল সে সম্পর্কে একটু ধারণা নেওয়া যাক।

আইএইচআই এর গবেষক বলছিলেন, ‘আমি যখন এখানে কাজ শুরু করি, তখন আলোর ফাঁদ পেতে যে মশাগুলো ধরা হতো, সেগুলো গুনে শেষ করা যেত না। প্রতিদিন ওজন করা হতো। কোনো কোনো রাতে মশা সংগ্রহের ব্যাগ ভরে মশা উপচে পড়ত।’

তবে অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। গত ১৭ বছরে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুহার ৬০ ভাগ কমেছে। মশার কামড়ে সংক্রমণও কমেছে শতকরা ৩৩ ভাগ। আরেক হিসেব বলছে, ১৯৮০ সালে ইফাকারায় একজন মানুষের প্রতিবছর গড়ে যেখানে ২০০০ সংক্রামক মশা কামড়াত, সেখানে এখন বছর কামড়ায় মাত্র ১৮টি সংক্রামক মশা।

শুধু তানজানিয়ার ইফকারায় নয়, মশাবাহিত রোগ কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে সারা বিশ্বেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)র তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালের তুলনায় বিশ্বে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে থাকা এবং ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অন্তত শতকরা ১৮ ভাগ কমেছে। কমলেও এখনো যা রয়েছে সেই সংখ্যাই অবশ্য রীতিমতো ভীতিকর। ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে ছিল অন্তত ৩২০ কোটি মানুষ এবং ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে কমপক্ষে ২১ কোটি ২০ লাখ মানুষ।

এক মশা নগরের কথা
‘মশার নগর’ ইফাকারায় মশানিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি মশা এবং ম্যালেরিয়া নিয়ে গবেষণাও চলছে জোর কদমে। আইএইচআই এর গবেষকরা তো রয়েছেনই, স্থানীয়রাও বাঁচার তাগিদে নানাভাবে সহায়তা করছেন তাঁদের।

ফাকারার অধিকাংশ মানুষই খুব গরিব। তাঁদের ঘরগুলোও খুব ছোট ছোট। বেশির ভাগ মানুষই বাস করেন এমন ঘরে যেখানে একটি বা দুটি বিছানা পাতার পর আর জায়গা থাকে না। ফলে ঘুমানো ছাড়া বাকি সব কাজই করতে হয় ঘরের বাইরে।

আইএইচআই তাই মশা ধরতেও মানুষকে কাজে লাগায়। অল্প পারিশ্রমিকে অনেকেই ঘরের বাইরে বিশেষ ধরনের মশারির নিচে বসে থাকেন। মশারির সঙ্গে এক ধরনের মশা ধরার ফাঁদের সংযোগ থাকে। ফলে মানুষের রক্তের লোভে মশারিতে বসতে গিয়েই ধরা পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা।

টাকার বিনিময়ে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘরের বাইরে মশারির নিচে বসিয়ে রেখেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হলো বিষ মাখানো মশারি। একসময় মশারি যে মরণফাঁদ তা-ও টের পেয়ে গেল মশা। তাই মানুষ যখন ঘুমাতে যায় তার ঠিক আগে এবং ভোরে যখন ঘুম থেকে ওঠে, তখন রক্তক্ষুধা মেটানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়ল তারা। অবস্থা সামাল দিতে তাই এবার এসেছে 'মসকুইটো ল্যান্ডিং বক্স' (এমএলবি)। কাঠের তৈরি কালো রংয়ের এ এমন এক বাক্স, যা আসলে মশা মারার নতুন ধরনের ফাঁদ। বাক্সে যাতে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা এসে বসে, সে ব্যবস্থা করতে অভিনব উপায়ে বাতাসে ছড়নো হয় মানুষে ঘামের গন্ধ। সেই গন্ধ পেলেই মশারা ভাবে বুঝি যন্ত্রটির ভেতরেই রয়েছে তাদের 'সুস্বাদু' খাবার। খাবারের লোভে উড়ে এসে বসলেই তাদের জীবনাবসান। 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত