বিশ্বের মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের শেষ খাবার

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০১৭, ২৩:৩৯

জাগরণীয়া ডেস্ক

মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিকে একটি শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। আর তা হলো মৃত্যুপূর্ববর্তী সময়ে তার শেষ খাবারটি বাছাই করার সুযোগ। জীবনের শেষবারের মতো বেছে নেওয়া খাবারে কেউ আবদার করেছেন যৎসামান্য, কেউবা মানেননি কোনো বাধা। আবার কোনো কোনো অপরাধীর শেষ ইচ্ছে এতটাই বিদ্ঘুটে ছিল যে তা নিঃসন্দেহে অবাক করার মতো-

ভিক্টর ফেগুইর: ১৯৬৩ সালে ২৮ বছর বয়সে আইওয়ায় প্রাণঘাতী ইনজেকশন দিয়ে (মতান্তরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে) তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। অপহরণ ও খুনের দায়ে তার এ সাজা হয়েছিল। এই অপরাধী তার শেষ খাবার হিসেবে চেয়েছিল শুধুই বীজসহ একটি জলপাই! একদিন তার শরীরের ভেতর থেকে জলপাই বীজটি গাছে পরিণত হবে এবং তা হবে শান্তির প্রতীক-এমনটিই ভেবেছিল সে। তাই শুধু বীজযুক্ত একটি জলপাইয়ের স্বাদই তার মুখ শেষবারের মতো নিতে পেরেছিল।

জন ওয়েইন গেসি:  গেছি হচ্ছে ভিক্টরের ঠিক উল্টো। ধর্ষণ ও হত্যা মিলিয়ে মোট ৩৩টি মামলা এই ক্রমিক খুনির উপর চলেছিল। ১৯৯৪ সালে ৫২ বছর বয়সে ইলিনয়ে মারণ ইনজেকশন দিয়ে তার মৃত্যু কার্যকর করা হয়। মরার আগে খাবারের যে ফরমায়েশ দিয়েছিল এ লোক তা নেহাত কম কিছু নয়। বারোটি ভাজা চিংড়ি, কেএফসির ফ্রাইড চিকেন বাকেট, ফ্রেঞ্চফ্রাই এবং এক পাউন্ড স্ট্রবেরি একাবারেই সাবার করে তবেই পৃথিবী ছেড়েছিল এই ব্যক্তি। তাকে ধরার আগ পর্যন্ত মোট ৩টি কেএফসি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক হিসেবে সে কাজ করেছে বলে জানা যায়।

টিমোথি ম্যাকভেই: ওকলাহোমা সিটিতে বোমা হামলা করা এই সন্ত্রাসীকে ২০০১ সালে ইন্ডিয়ানায় ৩৩ বছর বয়সে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হয়। ১৬৮টি খুনের অপরাধে তার এই সাজা হয়। মৃত্যুর আগে সে দু’পাইন্ট মিন্ট চকোলেট চিপস আইসক্রিম খাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল শেষ খাবার হিসেবে।

রিকি রে রেক্টর: ১৯৯২ সালে আরকানসাসে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় এই ৪২ বছর বয়সীর। দুটি খুনের অপরাধে তার এ সাজা হয় যার একটির শিকার ছিলেন পুলিশ অফিসার রবার্ট মার্টিন (১৯৮১)। তার শেষ খাবার ছিল স্টেক, ফ্রাইড চিকেন, চেরি কুল-এইড নামক পানীয় এবং পেকান পাই।

স্টিফেন অ্যান্ডারসন: চুরি, লাঞ্ছনা, ৭টি খুন ও জেল পালানোর অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। ৮১ বছর বয়সী এক পিয়ানো শিক্ষিকাকে সরাসরি মুখে গুলি করে মারে স্টিফেন। ৪৯ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ায় বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। দুটো গ্রিলড চিকেন স্যান্ডউইচ, এক পাইন্ট কটেজ চিজ, হোমিনি (ভুট্টার মিশ্রণ), পিচ পাই, চকোলেট চিপ আইসক্রিম এবং মুলা ছিল মৃত্যুর আগে তার চাওয়া খাবার।

টেড বান্ডি: নৃশংস এই অপরাধী ধর্ষণ, মৃতদেহের সঙ্গে সঙ্গম, জেল থেকে পালানো ও ৩৫টিরও বেশি খুনের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পায়। ফ্লোরিডায় বৈদ্যুতিক চেয়ারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ৪৩ বছর বয়সী এই ব্যক্তির। এও বিশেষ কোনো খাবারের বিষয়টি নাকচ করে দেয়। তাই তাকে ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রচলিত শেষ খাবার দেওয়া হয় যার মধ্যে ছিল-একটি স্টেক, ডিম, হ্যাশ ব্রাউন, মাখন ও জেলিসহ ব্রাউন টোস্ট, জুস এবং দুধ। তবে সে সেগুলোও খায়নি।

এরিক ন্যান্স: খুনের দায়ে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যু দেওয়া হয় এই আমেরিকান খুনিকে। খুনের আগে সে দুটো বেকন চিজবার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, দুই পাইন্ট চকোলেট চিপ কুকি ডো আইসক্রিম ও দুটি কোকো-কোলা খেয়েছিল।

তেরেসা লুইস: হত্যা, ষড়যন্ত্র ও ডাকাতির দায়ে ভার্জিনিয়াতে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এই নারীকে। সে ফ্রাইড চিকেন, মাখনসহ মটরশুঁটি, অ্যাপল পাই এবং ডক্টর পেপার নামক পানীয় মৃত্যুর আগে খেয়েছিল।

ব্রেন্ডন জোনস: খুনের অভিযোগে এই ৭২ বছর বয়সীকে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে জর্জিয়াতে সাজা দেওয়ার আগে শেষ খাবার বাছাই করতে সে অস্বীকৃতি জানায়। তাই শেষবারের মতন তার পাতে জোটে ভাত, মুরগি, রুটাবাগা, সিজনড টার্নিপ গ্রিন, শুকনো হোয়াইট বিন, কর্নব্রেড, ব্রেড পুডিং ও পাঞ্চ।

ক্রিস্টোফার ব্রুকস: হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে ২০১৬ সালে আলাবামায় মৃত্যু দেওয়া হয় এই ৪৩ বছর বয়স্ক অপরাধীকে। তার শিকার ডিন ক্যাম্পবেলকে সে বারবেল দিয়ে মেরে হত্যা করে। তাকে মৃত্যুর পূর্বে বিস্কুট, সসেজ, জেলি ও পনির পরিবেশন করা হয়েছিল যা সে না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে মিষ্টি কিছু খেতে চেয়েছিল। তাই সে পছন্দসই খাবার হিসেবে দুটো পিনাট বাটার কাপকেক ও ডক্টর পেপার নামক পানীয় দেওয়ার অনুরোধ জানায়। এগুলোই ছিল তার চেখে দেখা শেষ খাবার।

উইলিয়াম ক্যারি স্যালি: প্রাক্তন স্ত্রীর বাবাকে খুন করে ওই নারী ও তার বোনকে অপহরণ করে সে। অসংখ্যবার ধর্ষণ করে তাদের। এই অপরাধে ২০১৬ সালে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হয় জর্জিয়ার এই ষাট বছর বয়সীকে। ২৬ বছর মৃত্যুর জন্য অপেক্ষমাণদের তালিকায় ছিল সে। তার খাওয়া শেষ খাবার ছিল পেপেরনি ও সসেজসহ একটি মাঝারি আকৃতির পিৎজা, বাফেলো সসযুক্ত চিকেন উইংস, বড় সাইজের একটি সোডা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত