আজও শোনা যায় সাত কন্যার অতৃপ্ত আত্মার তীব্র চিৎকার!

প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৭:১৪

জাগরণীয়া ডেস্ক

কেল্লার দরজায় সাতটি কন্যার ছবি, তাদের চোখ দেখলেই ভয় পায় এলাকাবাসী৷ গভীর রাতে শোনা যায় অত্যাচারের তীব্র চিৎকার৷ গোটা দেশ যখন অক্ষয় তৃতীয়ার উৎসবে মেতে উঠে ঠিক তখন কেল্লার লাগোয়া গ্রামে অশুভ দিন পালিত হয়৷ সবমিলে রোমাঞ্চ আর ইতিহাসে ঠাসা এক অদ্ভুত কেল্লা,যার সঙ্গে জড়িয়ে  ছমছমে গল্প৷

উত্তরপ্রদেশের ললিতপুর জেলার তালবেহট গ্রামের কেল্লার গল্প অন্তত ১৫০ বছরের পুরনো৷ 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সবাই দিনের বেলাতেই কেল্লায় যেতে ভয় পান৷ চট করে কেউ সেখানে যায় না৷ ১৫০ বছর আগে একটা ভয়ানক কাণ্ড ঘটেছিল ললিতপুর কেল্লায়৷ তারপর থেকে এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে ভয়৷ 

কেল্লার মূল ফটকে আঁকা সাত কন্যার ছবি এই ভয়ের কারণ৷ কেনও এমন ভয়?

জানা যায়, ১৮৫০ সালের ঘটনা৷ ললিতপুর সংলগ্ন বাতপুরের জমিদার ছিলেন মর্দন সিং৷ জমিদারির কাজে আসা যাওয়ার সময় স্থানীয় তালবেহট গ্রামের  কাছে একটি কেল্লা বানিয়েছিলেন৷ ১৮৫৭ সালে দেশজুড়ে ‘সিপাহি বিদ্রোহ’ (ঐতিহাসিকদের একাংশের মতে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম) ছড়িয়ে পড়ে৷ সেই বিদ্রোহে অংশ নেন জমিদার মর্দন সিং৷ তিনি সরাসরি ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়াই শুরু করেন৷ কুশলী যোদ্ধা ছিলেন মর্দন সিং৷ এলাকায় এখনও তাঁর নাম সম্মানের সঙ্গেই নেওয়া হয়৷ মর্দন সিং সম্মান পেলেও তাঁর পিতা প্রহ্লাদ সিংয়ের নাম শুনলে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেন এলাকাবাসী৷

শোনা যায়, বিদ্রোহের মাঝে এক অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে ললিতপুরের মহিলারা রীতি মেনে জমিদার বাড়িতে দাণ গ্রহণ করতে গিয়েছিলেন৷ সেই দলে ছিল তালবেহট গ্রামের সাত কন্যা৷ তাদের রূপ দেখে কেল্লায় একলা থাকা প্রহ্লাদ সিংয়ের মাথা ঘুরে যায়৷ সেপাই পাঠিয়ে সাত কন্যাকে বন্দি করে৷ তারপর তাদের ধর্ষণ করে বৃদ্ধ প্রহ্লাদ সিং৷ লজ্জায় ওই সাত কন্যা কেল্লার ছাদ থেকে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করেছিল৷ তালবেহট গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে হাহাকার৷ পরে সব জানতে পারেন জমিদার মর্দন সিং৷ পিতার কুকর্মে রীতিমতো মুষড়ে পড়েন রানি লক্ষ্মীবাইয়ের সহযোগী৷ মর্দন সিংয়ের নির্দেশে এক চিত্রকর কেল্লার মূল ফটকের উপর ধর্ষিতা সাত কন্যার ছবি এঁকে দিয়েছিলেন৷ সেই ছবি এখনও রয়েছে৷ তবে অক্ষয় তৃতীয়ার দিনটি আর পালন করেন না ললিতপুরের তালবেহট গ্রামের বাসিন্দারা৷ এই দিনটি তাঁদের কাছে অশুভ৷

ধর্ষণের শিকার ওই সাত কন্যার অতৃপ্ত আত্মার চিৎকার এখনও কেল্লার ভেতরে প্রায়ই শোনা যায়৷ জানিয়েছেন এলাকাবাসী৷ এমনি করেই দেড়শ বছর পার হয়ে গিয়েছে৷ যোদ্ধা জমিদার মর্দন সিংয়ের কেল্লা ক্রমে ভৌতিক বাড়ি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে৷ দিনে হোক বা রাতে চট করে কেউ সেখানে যেতে চান না৷ কেল্লার মূল ফটকে আঁকা সেই সাত কন্যার চোখ যেন সর্বক্ষণ প্রতিশোধের জন্য মুখিয়ে রয়েছে৷

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত