মৃত মায়ের গর্ভে ১২৩ দিন থাকার পর জমজ শিশুর জন্ম

প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০১৭, ১৮:২০

জাগরণীয়া ডেস্ক

‘সেরিব্রাল হেমারেজ’ নামের রোগে আক্রান্ত হয়ে এক নারীর মস্তিষ্কের মৃত্যুর ১২৩ দিন পর তার গর্ভ থেকে জোড়া শিশুর জন্ম হয়েছে। কল্পকাহিনীর মতো এই ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাজিলে। সেখানকার অধিবাসী ফ্রাঙ্কলিন ডি সিলভার মস্তিষ্কের মৃত্যু সত্ত্বেও তার গর্ভেই বাঁচিয়ে রাখা হয় দুই শিশুকে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছে, ওই দুই শিশু পৃথিবীর আলো দেখেছে।

গত বছরের অক্টোবরে সেরিব্রাল হেমারেজ আক্রান্ত হয়ে মস্তিষ্কের মৃত্যু হয় ফ্রাঙ্কলিনের। সেই সময় গর্ভের যমজ সন্তানের বয়স মাত্র নয় সপ্তাহ (দুই মাস)। স্ত্রীকে হারালেও ফ্রাঙ্কলিনের স্বামী মুরিয়েল পেডিলহা হার মানতে চাননি। দুই সন্তান তখন মায়ের গর্ভে।

মা হতে চলা মৃত স্ত্রীকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখতে চিকিৎসকদের অনুরোধ করেন ২৪ বছর বয়সী মুরিয়েল। চিকিৎসক ডালটন রিভাবেম-এর দুর্দান্ত ভূমিকায় অসম্ভবকে সম্ভব করা হয়। উল্লেখ্য, এর আগেও তিনি পর্তুগালে ১০৭ দিন গর্ভাবস্থায় বাচ্চার জন্মদানে সহায়তা করেছিলেন।

১২৩ দিন মায়ের গর্ভেই বেড়ে ওঠে শিশু দুটি। চিকিৎসক ডালটন রিভাবেমের নেতৃত্বে হাসপাতালের নিউরোলজিক্যাল নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চলতে থাকে ফ্রাঙ্কলিনের চিকিৎসা। গর্ভে নিশ্চিন্তে শিশু দুটি বেড়ে ওঠার জন্য যা যা করা দরকার নস্যে সেনহোরা ডি রোকিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসক,-নার্সসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শিশু দু’টিকে পৃথিবীর আলো দেখাতে সাধ্যাতীত ভূমিকা পালন করে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাত মাসের গর্ভাবস্থায় অস্ত্রোপচারে জন্ম হয় শিশু দুটির। জন্মের সময় বোন অ্যানা ভিক্টোরিয়ার ওজন ছিল ১ কেজি ৪০০ গ্রাম আর ভাই আসাফের ১ কেজি ৩০০ গ্রাম।

দুই মাসের চিকিৎসার পর মে মাসের দিকে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে যায় অ্যানা ও আসাফ। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল প্রায় পুরো ব্রাজিল। ওই দম্পতির ইসা বিয়েট্রিস নামে দুই বছর বয়সী আরও একটি মেয়েশিশু রয়েছে।

সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই দুই সন্তানের বাবা মুরিয়েল বলেন, ‘পেডিলার যখন সেরিব্রাল হেমারেজে (মস্তিষ্কের মৃত্যু) আক্রান্ত হয়, তখন আমি বাগানে গাছের পরিচর্যা করছিলাম। পেডিলা ফোনে জানায়, ওর মাথা অসহ্য যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। এখনই পড়ে যাবে। আমি যেন বাড়ি ফিরে আসি। দ্রুত বাড়ি ফিরে পেডিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকেরা জানান, মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তিন দিন ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অবশেষে জানানো হয়, আমার স্ত্রীর মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়েছে।’

শিশু দুটির আশা চিকিৎসকেরা ছেড়েই দিয়েছিলেন। মুরিয়েলের কাতর অনুরোধে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে চমকে ওঠেন চিকিৎসকেরা। কারণ, তখনো বেঁচে রয়েছে ভ্রূণ দুটি। মুরিয়েলের অনুরোধে তখনই চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নেন শিশুদের বাঁচাতে করণীয় সব করা হবে।’ বাবা মুরিয়েল এ ঘটনাকে ‘অলৌকিক ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেছেন।

তথ্যসূত্র: মেট্রো

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত